Gallery

[All Post][slideshow]

Search This Blog

Powered by Blogger.

Blog Archive

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী || Biography of Rabindranath Tagore

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী || Life of Rabindranath Tagore


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী || Biography of Rabindranath Tagore

বাংলা সাহিত্য জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই আমাদের সকলের প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর লেখা অসাধারণ সব কবিতা ও গান আজও প্রত্যেকটা বাঙালির মন সমানভাবে কাড়ে।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোট গল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষায় সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২ টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮ টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে প্রকাশিত রচনা ৩২ খন্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য ১৯ খন্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় ২০০০ ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে "গীতাঞ্জলি" কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।



জন্ম: ৭মে ১৮৬১

জোড়াসাঁকো, ঠাকুরবাড়ি, কলকাতা

ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)   

মৃত্যু: ৭ আগস্ট ১৯৪১ (বয়স ৮০) 

অভিভাবক: দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (বাবা)

                     সারদাসুন্দরী দেবী (মা)

সমাধিস্হল: কলকাতা

ছদ্ননাম: ভানুসিংহ ঠাকুর (ভণিতা) 

পেশা:

  • কবি ঔপন্যাসিক
  • নাট্যকার
  • প্রাবন্ধিক
  • দার্শনিক
  • সঙ্গীতজ্ঞ
  • চিত্রশিল্পী
  • গল্পকার 

ভাষা:

  • বাংলা 
  • ইংরেজি 

নাগরিকত্ব: বৃটিশ-ভারতীয় 

সময়কাল: বঙ্গীয় নবজাগরণ 

সাহিত্য আন্দোলন: প্রাসঙ্গিক আধুনিকতা 

উল্লেখযোগ্য রচনাবলি: 

  • গীতাঞ্জলি 
  • রবীন্দ্র রচনাবলী
  • আমার সোনার বাংলা 
  • জন গন মন
  • ঘরে বাইরে 

উল্লেখযোগ্য পুরস্কার:

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (১৯১৩) 

দাম্পত্যসঙ্গী: মৃণালিনী দেবী  

স্বাক্ষর: 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী || Biography of Rabindranath Tagore


ওয়েবসাইট: tagoreweb.in



রবীন্দ্রনাথের শৈশব ও কৈশোর (১৮৬১ - ১৮৭৮):

রবীন্দ্রনাথে ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ই মে বাংলা ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। এই পরিবারে পূর্বপুরুষ পূর্ববঙ্গ থেকে ব্যবসায়ের সূত্রে কলকাতায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। দ্বারকানাথ ঠাকুরের চেষ্টায় এ বংশের জমিদারি এবং ধন সম্পদ বৃদ্ধি পায়। ইংরেজি শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে লালিত এবং আত্মপ্রতিষ্ঠিত দ্বারকানাথ ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি জনহিতকর কাজে ও সাফল্য অর্জন করেন। উনিশ শতকের বাংঙ্গালির নবজাগরণ এবং ধর্ম ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। এই যুগে অন্যতম সমাজ সংস্কারক এবং একেশ্বরবাদের প্রবক্তা রাজা রামমোহন রায় ছিলেন দ্বারকানাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রামমোহন রায়ের আদর্শ ধারকানাথ, তাঁর পুত্ত দেবেন্দ্রনাথ এবং দৌহিত্র রবীন্দ্রনাথের ওপর এক অভাবনীয় প্রভাব বিস্তার করে।


রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতা-মাতার চতুর্দশ সন্তান। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল ব্রাক্ষ আদিধর্ম মতবাদের প্রবক্তা। রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষেরা খুলনা জেলার রুপসা উপজেলা মিঠাভোগে বাস করতেন। ১৮৭৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে। পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই বড় পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছু দিন পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয় শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশী স্বছন্দবোধ করতেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৭৩ সালে ১১ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশ ভ্রমণে বের হন। প্রথমে তাঁরা আসেন শান্তিনিকেতনে। এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে শিখদের উপাসনা পদ্ধতি পরিদর্শন করেন। শেষে পুত্রকে নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ পাঞ্জাবেরই ডালহৌসি শৈলশহরের নিকট বক্রোটায়। এখানকার বক্রোটা বাংলোয় বসে রবীন্দ্রনাথ তাঁর পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতিবিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন। দেবেন্দ্রনাথ তাঁকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জীবনী, কালিদাস রচিত ধ্রুবপদির সংস্কৃত কাব্য ও নাটক এবং উপনিষদ পাঠেও উৎসাহিত করতেন। ১৮৭৭ সালে ভারতীয় পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশিত হয়। এগুলো হলো মাইকেল মধুসূদনের "মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা", "ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী" এবং "ভিখারিনী" ও "করুনা" নামে দুটি গল্প। এর মধ্যে "ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী" বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই কবিতাগুলি রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলির অনুকরণে "ভানুসিংহ" ভণিতায় রচিত। রবীন্দ্রনাথের "ভিখারিনী" গল্পটি (১৮৭৭)  বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটগল্প। ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ তথা প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ কবিকাহিনী। এছাড়া এই পর্বে তিনি রচনা করেছিলেন সন্ধ্যাসংগীত (১৮৮২) কাব্যগ্রন্থটি। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা "নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ" এই কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।



রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা জীবন:

ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথ কলকাতার বিভিন্ন স্কুলে কিছুদিনের জন্য পড়াশোনা করেন। যেই স্কুল গুলোর নাম ছিল যথাক্রমে অরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট। কিন্তু এতগুলো নামী স্কুলে পড়ার পরেও, তিনি কোন স্কুলে বেশিদিন টিকতে পারেননি। এর পিছনে অবশ্য প্রধান কারণ ছিল তাঁর স্কুল শিক্ষার প্রতি অনীহা। জানা যায়, স্কুলের চার দেওয়ালের বদ্ধ পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর এই রীতি তাঁকে মোটেই পড়াশোনা শেখার প্রতি আকৃষ্ট করত না। এজন্য পরে, বাড়ির খোলা পরিবেশে পড়ানোর জন্য গৃহ শিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যাবস্তা করা হয়েছিল।    


এরপর ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডেে যান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেখানে একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন তিনি। তার ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু সাহিত্যচর্চার প্রতি আকর্ষণের কারণে তিনি সেই পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি।



যৌবন (১৮৭৮-১৯০১) :

১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড যান রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু সাহিত্যচর্চা আকর্ষনে সেই পড়াশোনা সমাপ্ত করতে পারেননি। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন শেকসপিয়র ও অন্যান্য ইংরেজ সাহিত্যিকদের রচনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে। সেই সময় তিনি বিশেষ মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন রিলিজিও মেদিচি, কোরিওলেনাস এবং অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা। এই সময় তার ইংল্যান্ডবাসের অভিজ্ঞতার কথা ভারতীও পত্রিকায় পত্রাকারে পাঠাতেন রবীন্দ্রনাথ। উক্ত পত্রিকায় এই লেখাগুলি জৈষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমালোচনাসহ প্রকাশিত হত য়ুরোপযাত্তী কোন বঙ্গীয় যুবকের পত্র ধারা নামে। ১৮৮১ সালে সেই পত্রাবলি য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র নামে গ্রন্থকারে ছাপা হয়। এটিই ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রথম গদ্যগ্রন্থ তথা প্রথম চলিত ভাষায় লেখা গ্রন্থ। অবশেষে ১৮৮০ সালে প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে কোন ডিগ্রী না নিয়ে এবং ব্যারিস্টারি পড়া শুরু না করে তিনি দেশে ফিরে আসেন।



রবীন্দ্রনাথের দাম্পত্য সঙ্গী:

ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আসার পর, অবশেষে ১৮৮৩ সালের ৯ই ডিসেম্বর তারিখে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয় বেনীমাধব রায়চৌধুরী নামে ঠাকুরবাড়ির এক অধঃস্তন কর্মচারীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে। বিয়ের সময় ভবতারিণীর পুণরায় নামকরণ করা হয় এবং তাঁর নাম পাল্টে রাখা হয় মৃণালিনী দেবী। 


স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ
স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ


পরবর্তীকালে, মৃণালিনী দেবী ও রবীন্দ্রনাথের ৫ সন্তান হয়। তাদের নাম যথাক্রমে মাধুরীলতা, রবীন্দ্রনাথ, রেণুকা, মীরা এবং শমীন্দ্রনাথ। 

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এদের মধ্যে অতি অল্প বয়সে রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথ মারা যায়।



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত এক কবি। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কাব্য রচনা শুরু করেন। তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা প্রধানত সংগীতস্রষ্টা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ প্রায় ২ হাজার গান লিখেছিলেন। কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি ১৩টি উপন্যাস, ৯৫ টি ছোটগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ এবং ৩৮ টি নাটক রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা রবীন্দ্র রচনাবলী নামে ৩২ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তার সামগ্রিক চিঠিপত্র উনিশ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রবর্তিত নৃত্যশৈলী "রবীন্দ্রনৃত্য" নামে পরিচিত।


ভারতীয় পত্রিকায় ১৮৭৭ সালে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশ করেন। সেগুলো ছিলো ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী, মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা আর ভিখারিণী ও করুনা নামে দুটি সুন্দর ছোটগল্প। এগুলোর মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায়।


এরপর ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ "কবিকাহিনী"। এছাড়াও তিনি রচনা করেছিলেন "সন্ধ্যাসংগীত" নামক আরেকটি কাব্যগ্রন্থ। "নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ" নামে লেখা তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতা এই কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ছিলো। 


এরপর একে একে "সন্ধ্যাসংগীত" কাব্যগ্রন্হ রচনার পর তিনি 

  1. প্রভাতসংগীত, 
  2. মানসী (১৮৯০), 
  3. সোনার তরী (১৮৯৪), 
  4. চিত্রা (১৮৯৬), 
  5. চৈতালি (১৮৯৬), 
  6. কল্পনা ও ক্ষণিকা (১৯০০), 
  7. নৈবেদ্য (১৯০১), 
  8. খেয়া (১৯০৬), 
  9. গীতাঞ্জলি (১৯১০), 
  10. গীতিমাল্য (১৯১৪), 
  11. ও গীতালি (১৯১৪), 
  12. বলাকা (১৯১৬), 
  13. শ্যামলী (১৯৩৬) 

প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন।


রবীন্দ্রনাথের সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত গ্রন্থ হল গীতাঞ্জলি, যেটার জন্য তিনি সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পান। আর এই কাব্যগ্রন্থের জন্যই তিনি ১৯১৩ সালের নোবেল পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন


তিনি ছিলেন একজন প্রতিভাবান সাহিত্যিক তাঁর হাতেই বাংলা প্রবন্ধ, রচনা, কবিতা, ছোটগল্পের বিপুল প্রসার ঘটে। তাঁর এইসব সাহিত্য কর্মের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, সাহিত্যতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, সঙ্গীতা, ছন্দ, ইতিহাস ইত্যাদি নানা বিষয় সম্পর্কে স্পষ্টভাবে ধারণা পাওয়া যায়।


তিনি কিন্তু শুধু কবিতা, গান, নাটক, ছোট গল্প, কিংবা উপন্যাস লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বিভিন্ন জীবনীমূলক ও ভ্রমণকাহিণী লেখাতেও তিনি ছিলেন সমানভাবে পটু। তাঁর বিখ্যাত কিছু আত্মকথা মূলক গ্রন্থ হল- জীবনস্মৃতি (১৯১২), ছেলেবেলা (১৯৪০), ও আত্মপরিচয় (১৯৪৩)।



শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা:


মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক বছর আগে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে, এক বিশাল জমি কেনেন। সেখানে তিনি ১৮৮৮ সালে একটা আশ্রম ও ১৮৯১ সালের একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।


বাবার সেই কেনা জমিতে রবীন্দ্রনাথ একটা শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাই প্রথমে তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন "পাঠ্য ভবন" নামে একটা স্কুল, যেটা বাকি সব স্কুলের থেকে বেশ আলাদা ছিলো। কারণ সেই স্কুল ছিল সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নীচে একটা গাছের তলায়। 


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী || Biography of Rabindranath Tagore
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ


পড়ে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি সেই স্কুলকে আরো বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে সেটাকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেন। যেটার পরবর্তীকালে নাম রাখেন তিনি "বিশ্বভারতী" যা ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়।


সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তিনি আবার ১৯২৪ সালে আরেকটি শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম ছিল "শিক্ষা সত্র"। তিনি এই প্রতিষ্ঠান মাত্র ৭ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু করেছিলেন।



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভ্রমণ:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট ১২ বার বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ৩০ টিরও বেশী দেশ ভ্রমণ করেন। প্রথম জীবনে দুইবার তিনি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। ১৯১২ সালে ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য তৃতীয়বার ইংল্যান্ডে গিয়ে কয়েকজন ইংরেজি কবি ও বুদ্ধিজীবীদের কাছে সদ্য রচিত "গীতাঞ্জলি" কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করে শোনান।


১৯১৬-১৯১৭ সালে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কতগুলি বক্তৃতা দেন। সেই বক্তৃতা গুলো তার "ন্যাশনালিজম" গ্রন্থে সংকলিত হয়।


 ১৯২০-১৯২১ সাল নাগাদ আবার ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান কবি।


১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ যান চীন সফরে। এরপর চীন থেকে জাপানে গিয়ে সেখানে ও জাতীয়তাবাদবিরোধী বক্তৃতা দেন কবি। এই বছরের শেষের দিকে পেরু সরকারের আমন্ত্রণে সেদেশে যাওয়ার পথে আর্জেন্টিনায় অসুস্থ হয়ে কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্যে ৩ মাস কাটান। স্বাস্থ্যের কারণে পেরু ভ্রমণ তিনি স্থগিত করে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে পেরু ও মেক্সিকো উভয় দেশের সরকারি বিশ্বভারতীকে ১,০০,০০০ মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য প্রদান করেছিল।


১৯২৬ সালে বেনিতো মুসোলিনির আমন্ত্রণ ইতালি সফরে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথমে মুসোলিনির আতিথেয়তার মুগ্ধ হলেও, পরে লোকমুখে তার স্বৈরাচারের কথা জানতে পেরে, মুসোলিনির কাজ-কর্মের সমালোচনা করেন কবি। এর ফলে উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ছেদ পড়ে।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী || Biography of Rabindranath Tagore
তেহেরানের মজলিসে রবীন্দ্রনাথ

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ সহ তাঁর সঙ্গীকে নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে গিয়েছিলেন ১৯২৭ সালে। তারপর তিনি একে একে ভ্রমণ করেন সুইজারল্যান্ড, সোভিয়েত রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইরাক ও পারস্য প্রভৃতি দেশ। ১৯৩৪ সালে শ্রীলংকা যাত্রাই ছিলো রবীন্দ্রনাথের শেষ বিদেশ যাত্রা।



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে আকর্ষণীয় সব তথ্য:

  • মাত্র আট বছর বয়স থেকেই তিনি কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। 
  • তিনি চিরাচরিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে একদম তুচ্ছ মনে করতেন এবং সেই চিরাচরিত শিক্ষার অধীনে থেকে পড়তে ভালোবাসতেন না। 
  • রবীন্দ্রনাথ একজন সুরকারও ছিলেন। তিনি প্রায় দুই হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছিলেন।
  • বিখ্যাত সিনেমা পরিচালক সত্যজিৎ রায়, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক কর্মকাণ্ডে বিশেষভাবে প্রভাবিত হন। "পথের পাঁচালী" সিনেমায় পরিচিত সেই ট্রেনের দৃশ্য, আসলে কবিগুরুর রচিত "চোখের বালি" তে বর্ণিত একটি ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত ছিলো।
  • তিনি ভারতীয় সাহিত্য ও কলায় বিপ্লবের উদ্দেশ্যে, বাংলায় নবজাগরণ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। 
  • তাঁর সাথে পৃথিবীর বিখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের গভীর সম্পর্ক ছিল এবং দুজনেই সেই সময় নোবেল পুরস্কারের জয়ের পর একে অপরের প্রশংসাও করেন।



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামাঙ্কিত স্মারক ও দ্রষ্টব্যস্থনল:

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়। 

শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ। 

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বীরভূম 

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ  

রবীন্দ্র পুরস্কার - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিক পুরস্কার - ভারত সরকার প্রদত্ত একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। 

রবীন্দ্রসদন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত কলকাতার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাগৃহ ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান কার্যালয়।

রবীন্দ্র সেতু - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত হাওড়া ও কলকাতা শহরের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী সেতু।

রবীন্দ্র সরোবর, কলকাতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত ভারতের একটি জাতীয় হ্রদ। এটি কলকাতার বৃহত্তম হ্রদ।

রবীন্দ্রনাথ সড়ক, যশোর, বাংলাদেশ।



রবীন্দ্রনাথের পুরস্কার ও অর্জন:

  • ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে শান্তিনিকেতনে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে "ডক্টরেট অব লিটারেচার" সম্মানে ভূষিত করে।
  • বিদেশে তাঁর রচিত "গীতাঞ্জলি" কাব্য, বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়। সেই সুবাদে তাঁকে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
  • ১৯১৫ সালে তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নাইট উপাধি পান। কিন্তু ১৯১৯ সালে ঘটে যাওয়া জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর তিনি উপাধি ত্যাগ করেন।
  • ১৯৩০ সালে রবীন্দ্রনাথের আঁকা একটি ছবি, প্যারিস ও লন্ডনে প্রদর্শিত হয়। 
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপানের ডাটিংটন স্কুলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
  • ১৯৬১ সালে, ভারতীয় ডাক বিভাগ তাকে সম্মান দেখানোর  উদ্দেশ্যে, তার ছবি সম্বলিত ডাকটিকিট প্রকাশ করে।



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু:

১৯৩৭ সালে কবি একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিকার হন। যদিও তিনি সেইসময় সেবার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন ঠিকই কিন্তু ১৯৪০ সালে আবার গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর তিনি আর সেরে উঠতে পারেননি।


অবশেষে দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট তারিখে, জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।


No comments:

Biography

[Biography][grids]

All Song Lyrics

[All Song Lyrics][stack]