Gallery

[All Post][slideshow]

Search This Blog

Powered by Blogger.

Blog Archive

কাজী নজরুল ইসলাম কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী || Kazi Nazrul Islam Biography In Bengali

কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী || Biography of Kazi Nazrul Islam


বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী
Kazi Nazrul Islam

কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি কবি এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ যোগ্য এবং তিনি ছিলেন বাঙালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ - এই দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের উপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।


জন্ম: কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ২৫ মে ১৮৯৯ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম।

মৃত্যু: ২৭ আগস্ট ১৯৭৬ (বয়স ৭৭) ঢাকা, বাংলাদেশে 

মৃত্যুর কারণ: পিক্স ডিজিজ

সমাধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ

জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৯-১৯৪৭)

                  ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৭৬) 

                  বাংলাদেশী (১৯৭৬) 

অন্যান্য নাম: দুখু মিয়া

নাগরিকত্ব: ব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৯-১৯৪৭)

                  ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৭২)

                  বাংলাদেশী (১৯৭২-১৯৭৬)

পেশা: 

  • কবি 
  • ঔপন্যাসিক
  • নাট্যকার 
  • গীতিকার 
  • সুরকার
  • সম্পাদক 

উল্লেখযোগ্য কর্ম:

  • চল্ চল্ চল্
  • বিদ্রোহী 
  • নজরুল গীতি 
  • অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থ 
  • বাঁধন হারা 
  • ধূমকেতু 
  • বিষের বাঁশি 
  • গজল

আন্দোলন: বাংলার নবজাগরণ 

দাম্পত্য সঙ্গী: 

  1. প্রমিলা দেবী
  2. নার্গিস আসার খানম

অভিভাবক: কাজী ফকির আহমদ (বাবা) 

                    জাহেদা খাতুন (মা) 

ধর্ম: ইসলাম

পুরস্কার: স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৭)   

              একুশে পদক (১৯৭৬) 

              পদ্মভূষণ 


সামরিক কর্মজীবন :

আনুগত্য: ব্রিটিশ সাম্রাজ্য

সার্ভিস/পেশা: ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী 

কার্যকাল: ১৯১৭-১৯২০

পদমর্যাদা: হাবিলদার 

ইউনিট: ৪৯ তম বেঙ্গল রেজিমেন্ট  

যুদ্ধ/সংগ্রাম: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ 

ওয়েবসাইট: nazrul-rachanabali.nltr.org 

স্বাক্ষর:

কাজী নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর
কাজী নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর


নজরুলের নিজ হাতে লেখা "তৌহিদেরই মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম"


কাজী নজরুল ইসলাম কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী || Kazi Nazrul Islam Biography In Bengali
তৌহিদেরই মুর্শিদ আমার মোহাম্মদের নাম


কাজী নজরুল ইসলামের প্রাথমিক জীবন:


বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের জন্ম হয় ২৪শে মে ১৮৯৯ সালে, বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত চুরুলিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম ছিল কাজী ফকির আহমেদ এবং মায়ের নাম ছিল জাহেদা খাতুন। কবি ছিলেন তাদের ষষ্ঠতম সন্তান। 


তাঁর বাবা ছিলেন আসানসোলের স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মা ছিলেন একজন সাধারণ গৃহবধু। নজরুলের তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠতম ছিলেন কাজী আলী হোসেন এবং দুই বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন কাজী সাহেবজান। ছোটবেলায় তাঁর ডাকনাম ছিল "দুখু মিয়া" যা পরবর্তীকালে সাহিত্য জগতে তাঁর ছদ্মনাম হয়ে ওঠে।


তাঁর পারিবারিক অবস্থা প্রথম থেকেই তেমন একটা ভালো ছিল না। চরম দারিদ্র্যের মধ্যেই তাঁর বাল্য, কৈশোর ও যৌবন বয়স কাটে। 


কিন্তু সীমাহীন এই পারিবারিক দুঃখ-দুর্দশার মধ্যেও তিনি আজীবন বাংলা কাব্য ও সাহিত্যচর্চা করে গিয়েছিলেন। কোনো বাঁধাই তাঁকে কোনদিনও দাবিয়ে রাখতে পারেনি।



নজরুলের প্রাথমিক শিক্ষা:


তিনি তাঁর পড়াশোনা শুরু করেন গ্রামেরই মসজিদ পরিচালিত একটি ধর্মীয় স্কুল থেকে। সেখানে তিনি কুরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্বের বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। পরে, ১৯০৮ সালে তার বাবা কাজী ফকির আহমদের মৃত্যু হয়। তখন তার বয়স মাত্র নয় বছর। পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তার শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয় এবং মাত্র ১০ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে নামতে হয় তাকে। এ সময় নজরুল মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উক্ত মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন। এবং মসজিদের মুয়াজ্জিন (আজান দাতা) হিসেবে কাজ শুরু করেন। এইসব কাজের মাধ্যমে তিনি অল্প বয়সে ইসলামের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পান যা পরবর্তীকালে সাহিত্যকর্মে বিপুলভাবে প্রবাহিত করে। 


কিন্তু কবি এইসব কাজ বেশি দিন করেননি। কবি নিজেকে শিল্পী রুপে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলার রাঢ় অঞ্চলের এক ভ্রাম্যমাণ নাট্যদলে যোগদান করেন। 


সেই দলে সাথে তিনি বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করতে যেতেন আর তাদের থেকে অভিনয়, গান ও নাচ প্রভূতি শিখতেন। এছাড়াও কখনো কখনো নাটকের জন্য গান ও কবিতা লিখে দিতেন তাদের সাহায্যের কথা ভেবেই। 


কাজী নজরুল ইসলাম শুধু মাত্র ইসলাম ধর্মগ্রন্হই অধ্যায়ন করেননি; তিনি অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ ও অধ্যয়ন করেছেন। তাঁর কাছে কোনো ধর্মই ছোট কিংবা বড় ছিলো না। এই জন্যই হয়তো আমরা তাঁর কবিতা, নাটক ও গানের মধ্যে দুই ধর্মের সমন্বয় কে খুঁজে পাই।


তিনি নাট্য দলে থাকাকালীন প্রচুর লোক সংগীত রচনা করেন। যার মধ্যে অন্যতম হলোঃ- দাতাকর্ণ, কবি কালিদাস, আকবর বাদশাহ, রাজপুত্রের গান, মেঘনাদ বধ, বিদ্যাভূতুম প্রভূতি। এছাড়াও তিনি হিন্দু দেবী কালীকে নিয়ে প্রচুর শ্যামা সংগীত ও রচনা করেন সেই সময়। যার জন্য অনেক ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষ তাকে কাফেরও পর্যন্ত বলেছিল।


এই বিষয়ে তিনি একবার বলেন- "আমি শুধু হিন্দু মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করার চেষ্টা করেছে, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি"


১৯১০ সালে নজরুল ইসলাম পুনরায় শিক্ষা জীবনে ফিরে আসেন। তিনি ভর্তি হন রানীগঞ্জ সিয়ারসোল রাজ স্কুলে এবং পরে মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুল।


কিন্তু সেইসব স্কুলে পড়ার পরেও তিনি কোনোটাতেই বেশি দিনের জন্য করতে পারেনি। আর্থিক সমস্যাই তাঁর সেখানে পড়াশোনা শেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়ার পর তাঁকে আবার কাজে ফিরে যেতে হয। তিনিই বাংলা সাহিত্যের চর্চা শুরু করেছেন বলা যায়।



নজরুলের সৈনিক জীবন:



১৯১৭ সালের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট ইউলিয়াম এবং পরবর্তী প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত প্রদেশের নওশেরায় যান। প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ১৯৭১ সালের শেষভাগ থেকে ১৯২০ সালের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর। 


করাচি সেনানিবাসে বসে নজরুল যে রচনাগুলো সম্পন্ন করেন তার মধ্যে রয়েছে বাউন্ডুলের আত্মকাহিনী (প্রথম গদ্য রচনা), মুক্তি (প্রথম প্রকাশিত কবিতা), গল্প: হেনা, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে, কবিতা: সমাধি ইত্যাদি। 


সৈনিক থাকা অবস্থায় তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। এই সময় নজরুলের বাহিনীর ইরাক যাবার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় আর যাননি। ১৯২০ সালে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়। এরপর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন।



কাজী নজরুল ইসলামের কেরিয়ার:


কলকাতায় ফিরে এসে কাজী নজরুল ইসলাম একইসাথে সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জীবন শুরু করেন। কলকাতায় তাঁর প্রথম আশ্রয় ছিল ৩২ নং কলেজ স্ট্রীটে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অফিসে। তিনি সেই সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা মোজাফফর আহমেদ এর সঙ্গে অনেক কাজ করেন।


এরপর যখন তাঁর রচিত উপন্যাস 'বাঁধন-হারা' এবং 'বোধন', 'শাত-ইল-আরব' ও 'বাদল প্রাতের শরাব' নামক প্রভূতি কবিতা; মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা ইত্যাদি সব নামকরা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তখন তা বাংলা সাহিত্য ক্ষেত্রে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। 


জানা যায়, ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে নজরুল ইসলাম একবার রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। তখন থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ২০ বছর, বাংলার এই দুই প্রধান কবির মধ্যে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা অক্ষুন্ন থাকে। তাঁরা একে অপরকেই গভীরভাবে শ্রদ্ধা করতেন এবং তৎকালীন রাজনীতি ও সাহিত্য নিয়েও মাঝে মাঝে আলোচনা করতেন বলে শোনা যায়।


কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতাটি ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি 'বিজলী' পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া মাত্রই জাগরণ সৃষ্টি করে। দৃপ্ত বিদ্রোহী মানসিকতা এবং অসাধারণ শব্দবিন্যাস ও ছন্দের জন্য আজও বাঙালি মানসিকতায় কবিতাটি 'চির উন্নত শির' বিরাজমান।


বল বীর 

বল উন্নত মম শির!

শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!

বল বীর-

বল মহা বিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি 

চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি 

ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া 

খোদার আসন 'আরশ' ছেদিয়া 

উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!

মম ললাটে রুদ্র-ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!

বল বীর- 

আমি চির-উন্নত শির।



নজরুলের বৈবাহিক জীবন:


১৯২১ সালে একবার কবি নজরুল ইসলাম, মুসলিম সাহিত্য সমিতির গ্রন্থ প্রকাশক আলী আকবর খানের সাথে কুমিল্লায় বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে যান। আর সেখানেই তিনি প্রমীলা দেবীকে প্রথমবার দেখেন। যার সাথে পরে তিনি প্রেম করেন এবং পরবর্তীকালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। 


কিন্তু এর আগে নজরুলের বিয়ে ঠিক হয়, আলী আকবর খানের শালী  নার্গিস আসার খানমের সাথে। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আলী আকবর খান তাকে শর্ত দেন ঘরজামাই হিসেবে থাকার জন্য, সেই শর্ত তিনি মোটেই মানেননি।


অবশেষে বাসর সম্পন্ন হবার আগেই নার্গিসকে রেখে কুমিল্লা শহরে বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে চলে যান। সেই সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং প্রমিলা দেবীই তাকে পরিচর্যা করে সুস্থ করে তোলেন। 


প্রমিলা দেবী এবং নজরুল ইসলামের সন্তান হলে কবি নিজেই তাদের সন্তানদের নামকরণ বাংলা এবং আরবি ভাষার সমন্বয়ে করেন। তাঁর সন্তানদের নাম রাখা হয় যথাক্রমে কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী সব্যসাচী, এবং কাজী অনিরুদ্ধ।



অসুস্থতা:


১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কবি নজরুল অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তার অসুস্থতা সম্বন্ধে সুষ্পষ্টরুপে জানা যায় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে। এরপর তাকে মূলত হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু এতে তার অবস্থা তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সেই সময় তাঁকে ইউরোপেও পাঠানো সম্ভব হয়নি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন। এরপর নজরুল পরিবার ভারতে নিভূত সময় কাটাতে থাকে। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তারা নিভূতে ছিলেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে কবি ও কবিপত্নীকে রাঁচির এক মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল নজরুলের আরোগ্যের জন্য গঠিত একটি সংগঠন যার নাম ছিল "নজরুল চিকিৎসা কমিটি",  এছাড়া তৎকালীন ভারতের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও সহযোগিতা করেছিলেন।


এরপর ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের মা মাসে নজরুল ও প্রমীলা দেবীকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠানো হয়। মে ১০ তারিখের লন্ডনের উদ্দেশ্যে হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন ছাড়েন।



বাংলাদেশে আগমন ও নাগরিকত্ব প্রদান:


              নাগরিকত্ব প্রদান


১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙ্গালীদের বিজয় লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে তারিখে ভারত সরকারের অনুমতি ক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশ নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কবির বাকি জীবন বাংলাদেশেই কাটে। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে নজরুলকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের সরকারী আদেশ জারী করা হয়।



নজরুলের মৃত্যু:


অবশেষে নজরুলের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে শুরু করে। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে। অবশেষে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করে।



নজরুলের সমাধি:


নজরুল তার একটি গানে লিখেছিলেন, "মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই, যেন গোরের থেকে মোয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই" কবির এই ইচ্ছার বিষয়টি বিবেচনা করে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী তাঁর সমাধি রচিত হয়।


তাঁর জানাজার নামাজে ১০ হাজারেরও অধিক মানুষ অংশ নেয়। জানাজা নামায আদায়ের পরে রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ জাতীয় পতাকামন্ডিত মৃতদেহ বহন করে সোহরাওয়ার্দী ময়দানে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। বাংলাদেশে তার মৃত্যু উপলক্ষে দুইদিন রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয় এবং ভারতের আইনসভায় কবির সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।



সম্মাননা

ভারত 


ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চুরুলিয়ায় "নজরুল একাডেমি" নামে একটি বেসরকারি নজরুল চর্চা কেন্দ্র আছে। চুরুলিয়ার কাছে আসানসোল মহানগরে ২০১২ সালে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। আসানসোলের কাছেই দুর্গাপুর মহানগরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানী কলকাতার যোগাযোগ রক্ষাকারী প্রধান সড়কের নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম সরণি। কলকাতা মেট্রো স্টেশনের নাম রাখা হয়েছে "কবি নজরুল মেট্রো স্টেশন"।


১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার "জগত্তারিণী স্বর্ণপদক" নজরুলকে প্রদান করা হয়। ১৯৬০ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা "পদ্মভূষণে" ভূষিত করা হয়।



বাংলাদেশ 

কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। তার রচিত "চল্ চল্ চল্, ঊর্ধগগনে বাজে মাদল" বাংলাদেশের রণ সংগীত হিসাবে গৃহীত হয়। নজরুলের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী প্রতি বছর বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশালে (বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়) ২০০৫ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কবির স্মৃতিতে নজরুল একাডেমী, বুলবুল ললিতকলা একাডেমী, এবং শিশু সংগঠন বাংলাদেশ নজরুল সেনা স্থাপিত হয়। এছাড়া সরকারিভাবে স্থাপিত হয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান " নজরুল ইনস্টিটিউট"। ঢাকা শহরে একটি প্রধান সড়কের নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ।


বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে তার বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে তাকে এই উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরে ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে "একুশে পদকে" ভূষিত করা হয়।



No comments:

Biography

[Biography][grids]

All Song Lyrics

[All Song Lyrics][stack]